12 AM বলে একখানি ব্যান্ড ছিল। বাংলাদেশের। লিড সিংগারের নামটা মনে পড়ছে না এ মুহূর্তে, কী জানি পরে হয়তো যদি আসে ঘুম, ঘুমের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে যাবে সে। সে ব্যান্ডটা বোধয় টেকেনি, পরে লিড সিংগার আরেক ব্যান্ড বানিয়েছিল যার নামটাও মনে নেই। ইদানীং এমনিতেও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে, বুঝি। এত্ত পাসওয়ার্ড চারিদিকে ছড়ানো, মানিব্যাগের (ওয়ালেট বলেন কেউ; যে এখন ভার্চুয়াল কড়ির পরিচিত আবাস) কথা ভুলে যাও, এমনি পকেটেই যেটাকে ছোটবেলা থেকে জ্যাব্ বলে ডাকি, চিনি, তাতেও যখন খুচরো কয়েনগুলো দেশজোড়া উঠে যাওয়ার পর কোনো খুচরো নোট রাখি সেটাও মনে রাখতে পারি না। এই তো দুর্দশা। সেই 12 AM-এর একটা গান আমি বহুবার শুনেছি, পরে ইউটিউব-টিউটিউবে দেখেওছি, যদিও সে গানের নামটাও মনে নেই। সে গানের আস্ত সব কিছুই যেন আমার মনে আছে, সুর, গলা, ভিডিওগ্রাফি, এমন মনেহয়। ওই দুঃখটুঃখ, এ রাত, এসব নিয়েই ছিল। রাত্তির বারোটা পেরিয়ে মনে পড়ছে আজকে কেন এই সকল তা আন্দাজ করতে পারি অবশ্য কিছুটা। আর এসব যে আজই কেবল মনে পড়ছে এমনও নয় জানি— সবদিন তো আর, নাহ্ সব রাত— জবরদস্তি ঘুমের দেবীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে যাই কেন খামোখা? তারচে বরং কোনো কোনো দিন— রাত হেঁটে বেড়ানো যায়, নির্জন পথে। যদিও জানা নির্জন পথ এত সস্তা নয়, সোজা নয় খুঁজে পাওয়া চট করে। সব পথে পুলিশের পায়চারি, রাজপথের চেয়ে মেঠোপথে কোথাও-তা বাদ নেই, ইভেন জঙ্গল-দোলা-ডাবরি, কোথাও সেনানী, ১৪৪, কার্ফু, নামকরা কোম্পানির লেঠেল, লোকচক্ষু। আরও নানান। ইত্যাদি। কোথায় সিক্রেট ক্যামেরা, ট্র্যাপ ক্যামেরা, উঁকি দিয়ে। সে ভয়। যদিও একটা দামাল হাতি। যদিও একটা দামাল হাতি সব অমান্য করে ছুটে যেতে চাইছে, সে ভাবছে কেউ দোহাই পাড়বে না সে যখন ছুটে যাবে, কেউ তার গড়নকে ঘাড় উঁচিয়ে দেখে বিস্ময় ছাড়বে না, নাম দেবে না তার ভগবান, বরঞ্চ ভাববে—কী ভাববে? এতটা হাতিটা ভাবতে পারে না, তার কেবল ছুটতে ইচ্ছে, তার পায়ে পরানো শেকলের শোভা ছিঁড়ে ছুটতে ইচ্ছে… এসব ভাবি। ভাবতে যদিও সুন্দরী AI, (হ্যান্ডসাম এআই বলাও জায়েজ, একই অঙ্গে কত্ত অরূপ) পইপই করে বারংবার বারণ করছে। আমাদের সর্বশক্তিমান, সরকার, তিনিও এক কথা। ভাবনায় এদের এলার্জি, অবশ্যই অপরকে ভাবতে দেওয়ায়। এ লিস্টে আরও কেউ আছে। না থাকার কিছু নেই। আমি যেমন। আমিও হতে পারি। আর আমি বললে ব্যাকরণের নিয়মে আরও কত পক্ষের কে কে— তাদেরই বাদ দিই-বা কী করে? এসব নিয়ে বিবাদ, চলবেই জানি আউল-বাউল এ মস্তকে, নিরন্তর। ইদানীং এদিকে রাত-বেরাত খুব হাতি বেরয়, নাম তার ‘মহাক্কাল বাবা’, তাইতেই এত অকথার হুড়মুড়ানি। মাঝকিলা বেটি (মেজো ফুফু) বলত ‘মহাক্কাল বাবা’, এ দেখি মনে আছে— বেটি মরে যাবার কতদিন পরেও মনে। বেটি, আমিলা বেওয়া। বর মরে গেছিল বলে নাকি ‘বেওয়া’, ‘বেওয়া’ বাদে কী ছিল তবে? বেঁচে থাকতে জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি বেটিকে। আজও জানি না আমি। আব্বাকে যদি জিজ্ঞেস করি? জানি না নাতি-লম্বা চাপ-দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে পারবে কিনা বাবা। চা-র দোকানি বেটির মুখটাও মনে আছে এখনও দেখছি। যদিও এঁকে দেখাতে পারব না, কিংবা তার কোথাও কোনো ছবি নেই, মোবাইলটা তো এল তারপর, তারপর ছবির হুড়োহুড়ি, সেলফিজোন। ক্যামেরা ছিল তখন কিন্তু আমরা কি আর এলিটের কেউ? দেওয়ানি-জমিদার-জোতদারও তো নই। অবশ্য দু’জনকে ভাগ করে সে ছবিটা দেখানোর সার্থকতাই-বা কী আজ? সেদিনই-বা কী? ছবি হলেও একদিন ছবিই হওয়া সবের, সবার, জীবাশ্ম। জীবাশ্মই শেষকথা সবের। এ নেহাতই আপনার মুখ, আপনজনের মুখ ভালোবেসে সাময়িক নার্সিসাসগিরি, আর কী?
রাত্তির বারোটা পেরিয়ে মনেহয় পথ নেই। ইদানীং পথ পাওয়া সত্যই দুষ্কর। ওদিক-এদিক প্রদর্শন আছে নানান, প্রদর্শক নাই। গুরু আছে। কিন্তু “তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি আর কেউ জানে না” হাল। কিংবা গুরু নাই। “গুরু তোমারই নামে” বলে তাই দুনিয়াজোড়া অন্ধকারে কলার ভুরা ভাসানো অত সোজা নয়। তুমি শরণার্থী এখন। সকলেই মোরা। কার শরণার্থী? পুলিশ, নদী কও বা সমুদ্দুর ওঁত পেতে আছে ওতে। গগনে ড্রোন। ধরে ফেলবে। যেতি দেবে না। ঢুকতে দেবে না। উলটে গরাদে গর্জিবে সরকারি (‘রাষ্ট্রীয়’ ব্যাপারটা বোঝা দায়, বুদ্ধিজীবী আর নেতায় ভালো বোঝে) বিচারের বাণী। কত কথা, কত অজুহাত, কত যুক্তি, কত তক্কো— সকলই পেশ করবে সমক্ষে চৌকিদার। তার একটা নাম হতে পারে দ্যাশরক্ষা। দ্যাশরক্ষাবাবদ নরবলী হবে এরপর, বলী বলা হবে না অবশ্য ওটাকে, বলতে হবে নরউৎসব বা এমন কিছুই। এতসব নাও হতে পারে সে আশাও এক আছে জানি— যদি নসিবে ঘটে নৌকাডুবি। ঝড়েই। ঝঞ্ঝাতেই। যাহাতে সব আসমান ধূলায় লুটায়। সে ঝড় কে ঘটাল? তার কথা আর থাক।
পথ নেই যখন পালাবার তখন ঘরেই হোক নাহয় ঘর-সাজানো। একটা সুড়ঙ্গ হোক তলে তলে। এমন তো কতই হয় অর্ধ আলো, আরও বেশি অন্ধকার, এই মিশে যে ভারতীয় কিংবা এশীয় কিংবা আফ্রিকান হতে পারে, চল সেই কায়া ধরি। যদিও ধরতে চাইলেই ধরা যায় নাকি? সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্তি। এইমাত্র মনেহয় প্রচণ্ড পানি-পিয়াসের মতন, মনে ধরে নীলপরিদের মধ্যে একজনা— লোমশ যোনীতে মুখ, চুক্ চুক্… তোমার কানে তখন বাজছে, যেন গুঁজে থাকা হেডফোনে বাজছে, “শ্যাম কালিয়া সোনা বন্ধুরে…” মাকসুদ গাইছে। আহা! আহা! মুখ ফুটে যদিও বেরয় না, তৃপ্তি নাই এ সংসারে— কেননা পরির পাছায় তুমি আবিষ্কার কর ছ্যাকার দগদগে (সিগারেটের?), আলট্রা এইচডিও দ্রুত যেন ছাড়া ছাড়া, আবছা হতে থাকে, ‘নুনু’ মিইয়ে পড়ে। ‘নুনু’র অপর নাম ‘চ্যাট’ (বাহুল্য: এ ‘চ্যাট’ সে ইন্রেজির ‘চ্যাটিং’ নয় কিংবা ‘চ্যাটবট’, ‘চ্যাট জিপিটি’ নয়), আরেকটা ‘হোল্’, সে সুন্নত করা চ্যাটের মাথায় ঘোলাটে সাদা বীর্যের বিন্দু ভুল করে একবার খুঁজতে গিয়ে, মুতবার চাপ চলে আসে আপন বেগে। যেটুকু সুড়ঙ্গ খুঁড়ে যেটুকু সিদ্ধি, মুতের শেষ ফোঁটাটা ওরই এক কিনারায় চুঁয়ে পড়বার সময় একটা পাখির ডাক অত রাত্তিরে কোথাও থেকে আসতে চায় ঘরেতে। রাতচরা কিনা ভাবতে চাই কিন্তু ইচ্ছে করে না আর অতটা... খেয়াল করি “ও বউ কথা কও”… যার নাম সদ্যই জেনেছি বছর দুই-এক হবে, যার ডাক চিনি জন্মাবধি, নাম জানিনি, বাপ-মা বলেনি কিংবা জানে না কিংবা আমি শুধাতে বলিনি। বা আর কোনোভাবেও হয়নি জানা। তবে আম্মা কি আব্বা কেউ একজন কিংবা দু’জনেই বলেছিল ও পাখিটা নাকি ডাকে “মোর চৌদ্দ পুত্, মোর কীসের দুঃখ্” বলে… কিন্তু দুঃখ যে কীসে, কতভাবে মানুষের… বাঁড়া, এত রাত্তিরেও কোন্ ফাঁকে নিউজ-নোটিফিকেশন ঠিকই আসে ট্টুঁ ট্টুঁ করে, কেউ না কেউ ফলো করে আমার আ-পাদ্, মনেহয় এইবার একটা পিত্ত-বমি বেজায় দরকার—
(অসমাপ্ত। এই কারণ হেতু যে এইসব বাতেলার আদৌ কোনো সমাপ্তি আছে এ পার্থিবে?)