৮ মে, ২০২৪
রঞ্জিত কথা - শঙ্খ ঘোষ
রঞ্জিত কথা - শঙ্খ ঘোষ

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি-র সেই কথা মনে পড়ে –‘আমাদের ভিতরের এই চিত্রপটের দিকে ভালো করিয়া তাকাইবার আমাদের অবসর থাকে না। ক্ষণে ক্ষণে ইহার এক-একটা অংশের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি। কিন্তু ইহার অধিকাংশই অন্ধকারে অগোচরে পড়িয়া থাকে’। সেই অন্ধকারে এঁকে রাখা ছবিগুলো যা রঞ্জিত সিংহ’র ভেতরে একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে থেকে গিয়েছিলো, আমি সেগুলোকেই আলোয় আনতে চেয়েছি। ‘রঞ্জিতকথা’ তাই।

সময়, সে এক বিস্ময়ের সেতু। সে আমাকে নিয়ে চলেছে? না তাকে নিয়ে আমি চলেছি? সে তর্ক থাক।  সত্যিই তো এ কোনো ইতিহাস নয়। এ নিতান্তই ফেলে আসা সময়ের ছবি আঁকা। সেদিনই আমার ও রঞ্জিতদা’র মুখোমুখি আড্ডায় উঠে এলো ‘মহানিমগাছ’ কবিতাটির সেই কটা লাইন- ‘যেখানে সে পা দুখানি রেখেছে, সেখানে/কাল বিকেলের শেষ ঝড়ে/পড়ে আছে কুরে-খাওয়া সনাতন মহানিমগাছ’। কথা হচ্ছিলো এই ‘সনাতন’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে। আর কার লেখা? হ্যাঁ, শঙ্খ ঘোষ। এই পর্বে সেই কবি ও প্রাবন্ধিক। 

রঞ্জিতকথা পর্ব-১৩

কথক : রঞ্জিত সিংহ

লেখায় রূপদান : সব্যসাচী হাজরা

শঙ্খ ঘোষ

রবীন্দ্রগবেষক হিসেবে শঙ্খ ঘোষ আমার কাছে কতটা শ্রদ্ধার পাত্র সে কথা আমি লিখেছি ‘নানা চোখে নানা রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে। সেখানে বলেছিলাম –রবীন্দ্রনাথের কবিতার উৎকর্ষের কথা বলতে গিয়ে তাঁর কবিতার বর্জনীয় দোষত্রুটিকে শঙ্খ ঘোষ এড়িয়ে যান নি। রবীন্দ্রনাথের সমন্বয় বা সামঞ্জস্যবোধ, ব্যক্তিচেতনা থেকে বিশ্বচেতনার উত্তরণের উপস্থাপনা পদ্ধতি শঙ্খ ঘোষের প্রধান আলোচ্য বস্তু। গভীর চিন্তক ও আলোচক হিসেবে আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি, তাই কয়েকটি কথা আগে বললাম। শঙ্খ ঘোষের সাথে আমার আলাপ ষাটের দশকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র মাধ্যমে এবং সেই যোগাযোগ ওঁর মৃত্যুর আগে শেষ দিন পর্যন্ত ছিলো। আমার ‘শ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি’ বইটি শঙ্খদা ও অলোকদা দুজনকেই উপহার দিয়েছিলাম। ওঁরা এই বই প’ড়ে এতই আপ্লুত হয়েছিলেন যে বইটি যাদবপুর ইউনিভার্সিটি স্নাতক পর্যায়ে বাংলা বিভাগে রেফারেন্স বই হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো। ‘শ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি’ বইটি সেই সময়ে এত বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলো যে বইটি যাতে মানুষের কাছে না পৌঁছোয় তার জন্য প্রকাশনীর কাছ থেকে বই নিয়ে প্রচুর বই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো। সেই সময় শঙ্খদা ও অলোকদা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এমনকি আমি যেখানে চাকরি করতাম আমার অফিসেও দুজনে চলে এসেছিলেন বইটি নিয়ে কী করা যায়, তা আলোচনা করতে।  বইটির পরবর্তী সংস্করণের জন্য প্রকাশনী জোগাড় করারও চেষ্টা করেছিলেন শঙ্খদা, সফল হন নি। একটা কথা বলি, শঙ্খদা আমার কবিতা সম্পর্কে কোনোদিন কোনো মন্তব্য করেন নি, কিন্তু আমার প্রবন্ধ সম্পর্কে ওঁর যথেষ্ট পজিটিভ রি-অ্যাকশন ছিলো। আমি আরও ব্যাপারটি বুঝতে পারি যখন আমাকে দিয়ে দুবার সাহিত্য অ্যাকাডেমির আলোচনা চক্রে বক্তা হিসেবে উনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। একটিতে আমি আলোচনা করেছিলাম- দান্তের ‘ইনফেরনো’ ও  এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ আর দ্বিতীয়টিতে বিষ্ণু দে’র এলিয়ট। ফোন ক’রে জিজ্ঞাসা করেছিলেন – ‘অসুবিধা নেই তো? দুজনেই আপনার প্রিয়’। অনেকেই মনে করতেন -আমি ছাড়া এ বিষয়ে বলার লোক নেই।

আমি শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে গেছি কয়েকবার but I was not a frequent visitor তবে যখনই গেছি, ওঁর কাছ থেকে আর কিছু পাই না পাই, একটা সৌজন্যবোধের শিক্ষা লাভ করেছি। ওঁর স্ত্রী কত রকম ক’রে খাওয়াতেন, সত্যিই অবাক হোতাম। টেলিভিশনে দেখলাম করোনার আক্রমণে শঙ্খ ঘোষ চ’লে গেলেন, চ’লে গেলেন ওঁর স্ত্রী প্রতিমা ঘোষও। মন বড় ভারাক্রান্ত হয়েছিলো।1619032710 22metghosh 4col

একটা ঘটনা বলি, আমার লেখা একটি প্রবন্ধ ‘চিত্রক’ পত্রিকায় বেরিয়েছিলো। তাতে একটি তথ্যগত প্রমাদ ছিলো, শঙ্খ ঘোষ আমাকে টেলিফোনে জানালেন- ‘এই ভুল আপনার থেকে আশা করা যায় নি’। এই কথা জানতে পেরে অলোকদা আমাকে বলেছিলেন – ‘রঞ্জিত, এ এমন কিছু বড় ভুল না, শঙ্খদা ভুলটাই ধরলেন, প্রবন্ধ নিয়ে কিছু বলেন নি?’ পরে লেখাটি যখন বইটিতে বেরোয় আমি সংশোধন করে নিই ভুলটি। ভাবতে ভালো লাগে শঙ্খদা অত্যন্ত মনযোগের সাথে আমার প্রবন্ধ পড়তেন।

শঙ্খ ঘোষ একজন তথ্যনিষ্ঠ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। প্রাবন্ধিক হিসেবে ওঁর মেধা ও ক্ষমতা নিয়ে বলেছি অনেক আগেই। তবে শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধ সম্পর্কে আমি আমার বন্ধু দেবতোষকে বলেছিলাম ওঁর প্রবন্ধ প’ড়ে কারুর লেখা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায় না। আর ওঁর কবিতায় ছন্দের হাত অতি চমৎকার, সমসাময়িক ঘটনা ওঁর কবিতায় থাকলেও তা প্রকট থাকতো না। উনি বোধহয় বিশ্বাস করতেন কবিতাকে কবিতা হয়ে উঠতে হবে।

সংশ্লিষ্ট পোস্ট

 গাছ
হিমাংশু রায়

গাছ

চুপ করে বসে থাক আর শোন। গাছেরাও কথা বলে জানলাম কাল।  সকালে হাই তোলার মত করে গাছেরাও শব্দ করে শুকনো,ভেজা পাতাগুলোকে ঝেড়ে ফ্যালে সকালের প্রথম হাওয়ায়। তারপর একটু হাত পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করে, সকালের রোদে। শুকনো ডালগুলোর মড়মড় আওয়াজ শুনলে বুঝবি।

গদ্য৭ মে, ২০২৪
আমার রবীন্দ্রনাথ
ভবেশ বসু

আমার রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ হলেন জ্ঞান ও বোধ। তোমাদের আঁচলে কি ? কি বাঁধা আছে ? জ্ঞান ও বোধ বেঁধে রেখেছো কেন ? আঁচলে চাবি গোছা।তার সাথে রবীন্দ্রনাথ।সকল মায়ের আঁচলে বাঁধা।সন্তান ছুটতে ছুটতে চলে এল।চোখে ঘাম।মুখে ঘাম।পায়ে ধুলা।ছেলে মেয়ের পৃথক গামছা।গামছায় ছেলে মেয়ে পরিস্কার হল।  মা ওদের তো রবীন্দ্রনাথ দিলে না ? রবীন্দ্রনাথ গামছায় নেই।রবী আছেন আঁচলে।

গদ্য৭ মে, ২০২৪
 বাঙালীর নববর্ষ
বরুন চন্দ্র বর্মন

বাঙালীর নববর্ষ

নববর্ষ হল বাংলা পঞ্জিবাঙালীর নববর্ষকার প্রথম মাসের পহেলা দিন। তথা বঙ্গাব্দের প্রথম দিন হলো বাংলার নববর্ষ। দিনটি সমগ্র বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উদ্দীপনা। পুরানো দিনের গ্লনি জোড়াকে মুছে দিয়ে এক রাশ হাঁসি, আনন্দ আর গান দিয়ে ভুলিয়ে দিয়ে যায় এই নববর্ষ। সেই প্রাচীনকাল থেকে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এটি বাঙালির অত্যন্ত প্রাণের উৎসব। শুধু আনন্দ উল্লাসই নয়, সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। আমরা সকলেই সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়েই মহা ধুমধামের  সঙ্গে আমাদের নববর্ষ উদযাপন করি। একে অন্যকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে বলি ”শুভ নববষ”। 

গদ্য৭ মে, ২০২৪