তাকান। আপনাকেই বলছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে লাভ নেই। এ ঘরে শুধু আপনিই আছেন। আমাকে দেখতে হবে না। পাবেন না। ওই ক্যালেন্ডারের ভেতর বসে আছেন রামকৃষ্ণ। মনে হচ্ছে এক্ষুণি উঠে এসে, আপনাকে কষিয়ে মারবে এক চড়, "শালা, পেপার পড়তে পড়তে যৌন চিন্তা!"
হ্যাঁ, ভাবুন না কৃষ্ণের বকাসুর বধের দৃশ্য। দুটো চঞ্চুকে ধরে দু-ফাঁক করে দেওয়া... এটাও তা-ই। মাঠের মধ্যে থেকে ভেসে আসছে এক নারীর চিৎকার, আর আটজন পুরুষ প্যান্টের জীপার লাগাতে লাগাতে উঠে আসছে পৃথিবীতে ... ওদের চোখ-মুখ থেকে ঝরে পড়ছে অন্ধকার, আর নগ্ন নারীর দুটো পা হয়ে গেছে বকাসুর চঞ্চু ... সাদা সাদা বীর্য গুলো ছড়িয়ে ছিল সারা দেহে – এখন জল, রক্ত। পেপার বন্ধ করে দিন। আপনার মনে দুটো চিন্তা প্রবেশ করেছে। প্রথমত মনে হচ্ছে, একটু স্ত্রীর কাছে যাই, সাথে সাথে মনে পড়ছে, আপনার মেয়েতো প্রাইভেট টিউশন গেছে! ভয়! একটা চরম ভয় গ্রাস করল আপনাকে, আর ওমনি ঝুলে গেল আপনার যৌবন। যান, বাথরুমে যান। চোখেমুখে ছিটিয়ে আসুন কিঞ্চিৎ জীবন। বেশি চিন্তা করলে আপনার মাথার ভেতর থেকে ঘিলু বেরিয়ে যাবে। সেলুলয়েড ফ্রেমের চশমা খুলে রাখুন, কাচের পৃথিবী নয়, একটু বাস্তবতা খুঁজে আনুন মুঠো ভরে। আপনার চোখ বাথরুমের দেওয়ালে আটকে গেল। শ্যাওলা ছোপ ধরা দেওয়ালে যেন একটা চিত্র ভেসে উঠছে – স্ট্র্যাপ ছেড়া ব্রেসিয়ার পরে দৌড়চ্ছে আপনার মেয়ে, ক্লাস টেন, আর পিছলে পিছলে যাচ্ছে আগন্তুকের ভীড়। একটা পুরো গ্রাম এগিয়ে আসছে, একটা পুরো সমাজ এগিয়ে আসছে, আর আপনি কুচিকুচি হয়ে টুকরো হয়ে যাচ্ছেন কাঁটাতারের নির্মম ধাঁধায়।
চোখে অন্ধকার দেখছেন? হ্যাঁ, ঠিক, এটা আপনার জ্ঞান হারানোর পূর্ব মূহুর্ত ... আবার যখন জ্ঞান ফিরে পাবেন তখন আপনার মস্তিষ্ক বদলে যাবে, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠবেন, আপনার সামনে ছড়িয়ে নামবে বিদ্যুৎ ... ভাবুন 'কতক্ষণ আর আছি এই আমি হয়ে, এরপর আমি অন্য আমি হয়ে যাব।'
আপনি পড়ে যাচ্ছেন— গলা দিয়ে দমকে উঠছে বিষম, শ্বাস নালীটা আপনি নিজেই চেপে ধরেছেন। অসহ্য! আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পেরেছেন, তাই না? টেলিভিশনের সাথে, পেপারের সাথে, হুবহু মিলে যাচ্ছে এই মুখ। নাহ্! এতো আপনার মুখ নয়! মুখোশ! চামড়ার সাথে যুক্ত হয়ে আছে, খুলতে হবে, কেটে ফেলতে হবে কবজ কুণ্ডলের মতো। একটা ব্লেড … ভ্রু-মধ্যে জেগে উঠছে শত সহস্র শতদল, আর পাপড়ি গুলো হয়ে উঠছে পিরামিড; মমি হয়ে যাচ্ছে মুখটা … পকেট হাতড়ে ব্লেড মেলে না। মণিবন্ধ স্পর্শ করতে করতে একটা জীবন, একটা ব্লেড, একটা মুখোশ, একটা মুখ– এই মুখেরও মেয়ে আছে, সেই মেয়েটা দৌড়চ্ছে – ব্রা পরে … এই মুখেরও স্ত্রী আছে, দৌড়চ্ছে ব্রা পরে। আপনাকে আটকে রেখেছে ওরা। আপনাকে পেলে ঐ গ্রাম ছিঁড়ে কুটিকুটি করবে। ভাবুন এক্ষুণি জ্ঞান হারাবেন, নাকি কালকের সকালের জন্য ... যখন আপনাকে স্নান করিয়ে, চুল-দাড়ি কাটিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে, সুস্বাদু খাবার খাইয়ে, নিয়ে যাওয়া হবে একটা রুমে ...
চিন্তা গুলোকে জট পাকাবেন না। খবরের কাগজটা দলা পাকিয়ে একটু 'বল বল' খেলুন ... এই হাত ধরেছে অনেক মাংসের বল, কাল এই হাত থাকবে পেছনে বাঁধা, আর খুলবে না। আপনার সমস্ত শরীর থেকে ভেসে আসছে পচা মাংসের গন্ধ। আপনি পচে গেছেন, তাই রামকৃষ্ণ ক্যালেন্ডার থেকে বের হয়ে আপনাকে কষিয়ে চড় মারেননি। উনি পচা জিনিস স্পর্শ করেন না।
আপনার মাথায় এখন যথেষ্ট ঘিলু নেই। সব খেয়ে গেছেন জজ্ সাহেব। অসহ্য টেনশনে ব্লাড প্রেশার ফল্ করছে … সিরিয়াল কিলিংএর মতো সিরিয়াল রেপটাও যদি শিখে নিতে পারতেন! একটা নিখুঁত আর্ট, উহ্! শিল্পই তো জীবন। কিছুই শেখা হল না আপনার দ্বারা।
দাঁড়ান দাঁড়ান, এখন তো সবে পড়ে গেছেন, মরে যাননি … বেসিনের জল তলার পাইপ দিয়ে হুড়হুড় করে বের হয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে অন্ধকার, নোংরা, স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলা পড়া বাথরুম। আপনার পড়ে যাওয়া কেউ দেখতে আসবে না। ভাবুন সেই রাতের কথা, কিংবা আজকের রাত … আর ৭ মিনিট মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে, তারপর জ্ঞান হারাবেন, এটা আন্তর্জালের ইনফরমেশন, ভুল হতেই পারে না।
চোখ বুজে থাকুন। পায়ের আঙুল তিরতির করুক, মস্তিষ্ক এখনও সজাগ। কেউ ছুটে আসবে না। গীতার শ্লোক গুলো ছুটে আসছে শুধু, আর কৌরবপক্ষ থেকে ছুটে আসছেন দুঃশাসন, আপনার মাথার ভেতর ঢুকে পড়ে লুণ্ঠন করবেন মস্তিষ্কের আব্রু। কাল যখন আপনি ঐ রুমটায় পৌঁছবেন, তখন চারিদিকে সশস্ত্র কড়া পাহারা; ভাবুন, একবার, আপনার জন্য, কিছুক্ষণ হলেও গোটা দেশ তৎপর– প্রতিটি নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ, মিডিয়া … শুধু আপনারই জন্য।
এবার দেখুন, ভেসে আসছে কর্ণের রথের চাকা, আপনার ঘিলুকে তরল তেল হিসেবে ব্যবহার করতে চান উনি। চাকা আটকেছে, তেল দিলে স্মুদ হবে। নিন, এবার আপনার মাথাটা ফাঁকা … কাল আপনাকে ওই রুমেও নিয়ে যেতে পারে, আবার অ্যাসাইলামেও, সবই ভাগ্যের খেল। নয়তো আজ রাতেই বরফের ড্রয়ারে ...
দেখুন, কোনটা আপনার পারফেক্ট মনে হয় — এ পারফেক্ট সুইসাইড না এ পারফেক্ট হ্যাঙ্গিং?
এবার আপনি মাথা ঘুরে, দেওয়াল ধরে, গারদ জুড়ে পড়ে থাকুন। রাত এখনও পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট পোস্ট
আমার রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ হলেন জ্ঞান ও বোধ। তোমাদের আঁচলে কি ? কি বাঁধা আছে ? জ্ঞান ও বোধ বেঁধে রেখেছো কেন ? আঁচলে চাবি গোছা।তার সাথে রবীন্দ্রনাথ।সকল মায়ের আঁচলে বাঁধা।সন্তান ছুটতে ছুটতে চলে এল।চোখে ঘাম।মুখে ঘাম।পায়ে ধুলা।ছেলে মেয়ের পৃথক গামছা।গামছায় ছেলে মেয়ে পরিস্কার হল। মা ওদের তো রবীন্দ্রনাথ দিলে না ? রবীন্দ্রনাথ গামছায় নেই।রবী আছেন আঁচলে।
রঞ্জিত কথা - শঙ্খ ঘোষ
রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি-র সেই কথা মনে পড়ে –‘আমাদের ভিতরের এই চিত্রপটের দিকে ভালো করিয়া তাকাইবার আমাদের অবসর থাকে না। ক্ষণে ক্ষণে ইহার এক-একটা অংশের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি। কিন্তু ইহার অধিকাংশই অন্ধকারে অগোচরে পড়িয়া থাকে’। সেই অন্ধকারে এঁকে রাখা ছবিগুলো যা রঞ্জিত সিংহ’র ভেতরে একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে থেকে গিয়েছিলো, আমি সেগুলোকেই আলোয় আনতে চেয়েছি। ‘রঞ্জিতকথা’ তাই।
গাছ
চুপ করে বসে থাক আর শোন। গাছেরাও কথা বলে জানলাম কাল। সকালে হাই তোলার মত করে গাছেরাও শব্দ করে শুকনো,ভেজা পাতাগুলোকে ঝেড়ে ফ্যালে সকালের প্রথম হাওয়ায়। তারপর একটু হাত পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করে, সকালের রোদে। শুকনো ডালগুলোর মড়মড় আওয়াজ শুনলে বুঝবি।