৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কাফন
কাফন
শালকুঞ্জের বিপরীতে এম বি এ ডিপার্টমেন্ট তার পাশে একটা ছোট্ট নালা,  কিছু ছোটো ছোটো গাছ, হাঁটু ভেজার মত জল।দুপুরবেলা, প্রচন্ড রোদ,গাছের ফাঁক দিয়ে রোদ চুঁইয়ে পড়ছে । দুজন মধ্যবয়সী মহিলা কাঠের বোঝা পায়ের কাছে নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে । চোখ মুখে বয়সের  সমান্তরাল দাগ। চুঁইয়ে আসা রোদের আলো, বয়সের দাগ আর  বিষন্নতায় ভরা মুখ  । বোধন সাইকেল চালিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল,  রাস্তায় উঠতেই চোখাচোখি হল।দুটি মহিলার মধ্যে একজন  বললেন
 
-বাপই, বোঝাটা মাথাত তুলি দিবু
-হ্যাঁ, দেং ছে
বোধন সাইকেলটা রাস্তায়  রেখে বোঝাটা মাথায় তুলে দিতে গেল।অনেকটাই ভারী বোঝাটা, আট দশ কিলো তো হবেই। 
-খুব ওজন তো  ওজন নাগে না তোমাক?
বোধন জিজ্ঞাসা করলো
- ওজন তো আছে কিন্তু না নিগাইলে কি আর উপায় আছে রে বাউ। (দীর্ঘ:শ্বাস)
- কেনে?
- বাড়ি গেইলে খাবার দিবে না,বেটা, বেটার বৌ। 
- কেনে? তোমা তো উমার মাও হন
- হ্যাঁ, কিন্তু মাও বাপক দেখাইয়া কয়টা ছাওয়া আছে এলা ক? তুই বিয়াও করিছিস?
- না
- তাহৈলে তুইও বুঝবু না। যে ছাওয়াগিলাক কোলাপিঠি করি মানষি করলুং। উমায় এলা মোকে চেনে না। এইল্যা যে কি কষ্ট। ঘাটার মানষিগিলা আও না করিলে মুই ওইন্য রাস্তা দিয়া যাং। কিন্তু ঘরের মানষিগিলা যদি আও না করে কেমন করি থাকং, ভগবান এ জানে। মাঝেমইধ্যে মনে হয় আগের জন্মত বোধহয় কোনো পাপ করিছিলুং তায় এইল্যা কষ্ট দেয় ভগবান।
 চোখের জল ছলছল করছে, বোধন বুঝতেও পারছে না কি বলবে। পাশের মহিলাটি সান্ত্বনা দিলেন
-কি আর করবু সখি,  ভালো মন্দ সব মিলিয়ায় সংসার, এমন করিয়ায় বাঁচি থাকির নাগিবে
তারপর একটু থেমে আবার জিজ্ঞাসা করলেন
-কাফন দেখছিস,জিন্দা কাফন?
-কাফন তো দেখছুং, জিন্দা কাফন আরো কি?
-মানষি। যেইল্যা মানষি পাল্টি যায়, উমার চৌখত হামা মরি যাই বা উমায় হামার চৌখত মরি যায়। দেখা সাক্ষাৎ হইলে মনে হয় দুইটা কাফন দুইজনের দিকত দেখিয়া হাঁটি চলি গেল। 
মুইও এলা জিন্দা কাফন হয়া গেছুং একখান।
 
কাঠের বোঝাটা মাথায় তুলে দিতে গিয়ে বোধন বলল
-বোঝাটা মুই নিয়া যাং খানেক।
-না নাগে বাপই মাথাত তুলি দিলেয় হবে, তুই আজি নিয়া যাবু কালি সেলা মনে হবে আরো কাংয়ো একেনা আগে দিলে ভাল হইল হয়। দুই তিনদিন এমন হইলে সেলা মানষির উপরোত ভরসা চলি আসিবে আরো কষ্ট পাইম।
তার চাইতে ভাল হয় তুই সখিরও বোঝাটা মাথাত তুলি দেক আর  বড় মানষি হ,  ভালো মানষি হ।
 
মহিলা দুটি মাথায় কাঠের বোঝা নিয়ে চলে গেল রাস্তা ধরে। 
 
 বোধনের মনে হল , " জীবন কতটা জটিল,  মানুষও
তবু বেঁচে থাকার কী তীব্র বাসনা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি।"

সংশ্লিষ্ট পোস্ট

সোয়েটার
অবিন সেন

সোয়েটার

গন গনে নীল শিখা মেলে গ্যাসের উনুন জ্বলছে। কেটলিতে জল সেই কখন থেকে ফুটে চলেছে। বাষ্প হয়ে অর্ধেক জল মরে গেছে। সেই দিকে কোনও খেয়াল নেই নীলার। সে একটা বেতের গদি মোড়া আরাম চেয়ারে বসে আছে। কিচেনটা ঢের বড়। প্রায় প্রমাণ সাইজ একটা ঘরের মতো। এখানে বসে উলের কাঁটায় শব্দ তুলে সোয়েটার বুনে যাওয়া তার একমাত্র বিলাসিতা। শীতের দিনে আগুনের এই উত্তাপটা কী যে আরামের, নীলা তা কাউকে বোঝাতে পারবে না। গ্যাসটা কতক্ষণ জ্বলছে সে দিকে তার কোনও খেয়াল নেই। চায়ের জল বসানোটা আসলে একটা ছুতো। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতাকে সে প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিচ্ছে। গ্যাস পুড়ছে পুড়ুক। সেই নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। তার স্বামী বিপুলের টাকার অভাব নেই। তারা বিশাল ধনী না হতে পারে কিন্তু এই সব সামান্য বে-হিসেবী খরচ করার মতো তাদের ঢের পয়সা আছে।

গল্প৭ মে, ২০২৪
এখানে আসবে না কেউ
রঙ্গন রায়

এখানে আসবে না কেউ

চেক - হ্যালো টেস্টিং - শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন – জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গেল। ক্যালেন্ডারটা উড়ছে। দেওয়ালে ঘষটানির একটা শব্দ। পুরোনো বছর উড়ছে। আমি ৩১শে ডিসেম্বরে এসেই থমকে গেছি। বাইরে নতুন বছর চলছে, আমি পুরোনো বছরে। কীরকম অদ্ভুত লাগে। কাকতালীয় ভাবে দেওয়াল ঘড়িটাও বন্ধ। ব্যাটারি শেষ।

গল্প৭ মে, ২০২৪
অবনী বাড়ি আছো
পার্থসারথী লাহিড়ী

অবনী বাড়ি আছো

“আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছ?”

গল্প৭ মে, ২০২৪