“আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?”
.
কে যেন কড়া নাড়ছে। নিঝুম রাত্রি! পুরনো নাম, পুরনো গলার আওয়াজ। আমাকেই সে ডাকছে, কে? কে যেন উত্তরও দিল উচ্ছ্বাসে। আমি-ই-ই-ই... অমনি ছলাৎ-ছল একটা তরঙ্গ ভেঙে গড়িয়ে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে ভিজিয়ে দিল পুরনো চিরকালীন সৈকত। জোয়ার এলে সৈকত ছোট হয়ে আসে আবার ভাটির বেলায় সেই সৈকতই হয় দীর্ঘ কিন্তু সৈকতটা যার যার মতনই থাকে। দেওয়ালের এপার থেকে আমি দেখলাম একটা ঢেউ নাছোড়বান্দা, বারংবার এসে আছড়ে পরছে, আছড়ে পরছে যতক্ষণ না সে ওই দেওয়াল ছাপিয়ে যায়। দেওয়াল গলে যায় কিংবা ভেঙে যায়। শুধু সামনে দাঁড়িয়ে থাক তুমি। সেদিন তোমার দিকে চেয়েও তাকিয়ে থাকতে পারিনি দীর্ঘক্ষণ। গড়িয়ে গোড়ালি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো সাগরের জল। হটাৎ অমন এক ছলাৎ তরঙ্গ, বুকের ওপরে এসে ভাঙবে, কে জানত? ... তুমি আমি দুজনেই ভিজে একশা, তোমার জুতো ভেসে গেছে, এক হাতে সরাচ্ছ মুখের জল আর সহসা আতঙ্কিত অন্য হাতে খামচে ধরেছ আমার জামার কলার। সাগর ভিজিয়ে দিলে কেউ অখুশি হয়না। সুখ মাখিয়ে তৃপ্তিময় তোমার মুখ মেলে দিলে আমার মুখের উপর, বুকের উপর, সারা শরীরে বুলিয়ে দিলে তোমার দীপ্তি। ভিজে জবজবে শরীর, ভ্রূক্ষেপহীন লহমায় তুমি এক হতে চেয়েছিলে। অমন ভিড়ের মধ্যে আমরা দারুচিনি দ্বীপের ফাঁকে বেছে নিলাম নিজস্ব নির্জনতা।
তার পর কবে যে পাহাড় হয়ে গেছি বুকের উপর বরফ আর পর্ণমোচী বৃক্ষ। তুমি হয়ে উঠেছ নিরন্তর নদী। সেই দারুচিনি নির্জন দ্বীপ এখন রণক্ষেত্র। অবিরাম যাপনের যুদ্ধ। পাহাড়ের বুকের ভেতরে এখনও ছলাৎ ছল সাগরের জল, তার উল্লাস ঘিরে থাকে অন্য একটা দেওয়াল। আমি দেওয়ালের কাছে যাই, দেওয়ালকে জড়িয়ে ধরে আদর করি, চুমো খাই, তোয়াজ করি। কিন্তু দেওয়াল তো দেওয়ালই; স্থবির অব্যয়ের মত, নাকি বাতগ্রস্থ, চলৎশক্তি রহিত আমার হাঁটু। হাতুড়ীর আঘাতে বেরিয়ে আসে আয়ুর্বেদের মিথ্যে আশ্বাস। দেওয়াল পেরনো হয়না।
আর নদীটা ... নদীটার বুকের ভেতর এখনও জেগে থাকে একটা ঝর্ণা। শীর্ষ থেকে অবিরাম আহ্লাদী নৃত্য প্রতিনিয়ত ব্যথিত হয়েছে পাহাড়ের পুঞ্জীভূত প্রস্তর খণ্ডে। তার সুন্দরীয়ানায় ভরপুর নদীর নিপুন বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছেয়ে রাখে আমাদের অরন্যপথ। আকাশ নেমে আসে, চুমো খায়। সুন্দর হয়েছে ঊষর পাহাড়, সবুজ বনানী। তখন ডাক নামে ডাকলে সারা দেয় বাতায়ন চোঁয়ানো সুগন্ধি-শরবৎ, দরজার উজান বেঁয়ে উঠে আসে আশ্চর্য আলিন্দ ও দোপাটি। তারও বুকের ভেতর রয়েছে কি সাগর, ছলাৎ ছল অবিরাম রামধনু বুদবুদ ?
তবুও মাঝে মাঝে সেই পর্ণমোচী বৃক্ষের একটা শাখায় কয়েকটা ফিঙে এসে বসে, লেজঝোলা পাখি ছোট ছোট লাফদিয়ে কি যেন খুঁটে খায়। একটা দোয়েল শিস দিতে দিতে নরম ডালে বসে দোল খেয়ে যায়। ইদানীং চড়ুইগুলোকে দেখাই যায় না, ওরা একসময় বারান্দার ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধত ... আমার একটা ঝুল বারান্দা আছে সেখান থেকে এই সব দেখা যেত।
তবে ? এত রাতে কে এল? অতি পরিচিত স্বর, অন্দরে যেতে সময় নেয় নি, কিছু মাত্র ক্ষণ। ছিটকিনি আলগা হতেই দরজায় লাদাখি হাওয়ার ঝাঁপর। আর এক বরফ পাহাড়। অস্থির অধৈর্যে বলছে – “গাম্ভীর্য মূর্খের মুখোশ, আমি তাই ভাঙতে এসেছি”। ওই দেওয়ালটা আমাদের কোন কাজের?
এতো ধার করা কথা...... (ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে।)
হ্যাঁ, ধার-ই তো কিন্তু এটাই আমার কথা, এই মুহূর্তে আমিই আবিষ্কার করেছি, একদম আমার, আমার আমার আমার। সাগরে যাবো, যাবি ? এক নিশ্বাসে বলে গেল কথাগুলো।
এই বলতে এত রাতে ? “দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া”... ফোনেও তো বলা যেতো!
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
যেত ... যেত ... যেত ... তারপর কি যেন একটা বলার ছিল পাহাড়টার আর বলে উঠতে পারলনা। তিনবার “যেত” শব্দটা উচ্চারণের মাঝে পরে গেল লম্বা লম্বা ফাঁক।
হ্যাঁ, ফাঁকই তো। জানালা খুলে দিলেই শিকের ফাঁক গলে ঘরে ঢুকে পরে আমাদের ভাটিটার, কমলাবাগানের ছায়াছায়া পাহাড়ী সরু পায়ে হাটা রাস্তা; আমাদের রূপম ভ্যালীর ট্র্যাকিং, ওর চোখের মত কালো দীঘি আর তার বুকের উপর ঝুকে থাকা আমডাল ভরা পারপেল অর্কিড ফুল; শ্যাওলা ধরা ভার্সে রুটের রডোড্রেন্ডন, বৃষ্টি মুখর লাভার পথে চায়ের দোকান আর পাহাড়ি বালিকার আঁখ মিচোলি, “তুম তো বুড্ধা হো গিয়া” ... তাহলে কোথাও কী কিছু ফেলে এসেছি?
আমিও সাগরে যেতে চাই আবার। ফেলে আসাগুলোকে কুড়িয়ে আনব। কে না চায় সাগরের প্রতিটা তরঙ্গ শরীরে জড়িয়ে শিস দিতে দিতে নির্জন সৈকত? তোমাকে আবার একবার দেখব নদী। ভিড়কে আর লজ্জা পাইনা, কোলাহলের মধ্যেই নিজেদের জন্য গড়ে নেওয়া রামধনু বুদবুদের মধ্যে আমরা দুজন দোক্লা পাখী, বিলম্বীতে গান ধরবো......... “ তোমায় নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণে” ... হোক এ পূজার, আমার প্রেমের গানও এটাই।।
সংশ্লিষ্ট পোস্ট
সোয়েটার
গন গনে নীল শিখা মেলে গ্যাসের উনুন জ্বলছে। কেটলিতে জল সেই কখন থেকে ফুটে চলেছে। বাষ্প হয়ে অর্ধেক জল মরে গেছে। সেই দিকে কোনও খেয়াল নেই নীলার। সে একটা বেতের গদি মোড়া আরাম চেয়ারে বসে আছে। কিচেনটা ঢের বড়। প্রায় প্রমাণ সাইজ একটা ঘরের মতো। এখানে বসে উলের কাঁটায় শব্দ তুলে সোয়েটার বুনে যাওয়া তার একমাত্র বিলাসিতা। শীতের দিনে আগুনের এই উত্তাপটা কী যে আরামের, নীলা তা কাউকে বোঝাতে পারবে না। গ্যাসটা কতক্ষণ জ্বলছে সে দিকে তার কোনও খেয়াল নেই। চায়ের জল বসানোটা আসলে একটা ছুতো। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতাকে সে প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিচ্ছে। গ্যাস পুড়ছে পুড়ুক। সেই নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। তার স্বামী বিপুলের টাকার অভাব নেই। তারা বিশাল ধনী না হতে পারে কিন্তু এই সব সামান্য বে-হিসেবী খরচ করার মতো তাদের ঢের পয়সা আছে।
এখানে আসবে না কেউ
চেক - হ্যালো টেস্টিং - শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন – জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গেল। ক্যালেন্ডারটা উড়ছে। দেওয়ালে ঘষটানির একটা শব্দ। পুরোনো বছর উড়ছে। আমি ৩১শে ডিসেম্বরে এসেই থমকে গেছি। বাইরে নতুন বছর চলছে, আমি পুরোনো বছরে। কীরকম অদ্ভুত লাগে। কাকতালীয় ভাবে দেওয়াল ঘড়িটাও বন্ধ। ব্যাটারি শেষ।
সঙ্গে লেডিস আছে
খ্যাঁচ করে বাসটা ব্রেক চাপতেই লোকজন সব পেছন থেকে একবারে হুমড়ি খেয়ে গায়ে পড়লো তৃষানের গায়ে আর তাতেই ওর চটকাটা গেলো ভেঙে। মুখ দিয়ে দু একটা ব কারন্ত শব্দ বেরিয়ে এসেছিলো আর একটু হলেই কিন্তু ঠিক তখনই তৃষানের মনে পড়লো এসব কিচ্ছু বলা যাবে না আজ কারণ সঙ্গে লেডিস আছে।