খ্যাঁচ করে বাসটা ব্রেক চাপতেই লোকজন সব পেছন থেকে একবারে হুমড়ি খেয়ে গায়ে পড়লো তৃষানের গায়ে আর তাতেই ওর চটকাটা গেলো ভেঙে। মুখ দিয়ে দু একটা ব কারন্ত শব্দ বেরিয়ে এসেছিলো আর একটু হলেই কিন্তু ঠিক তখনই তৃষানের মনে পড়লো এসব কিচ্ছু বলা যাবে না আজ কারণ সঙ্গে লেডিস আছে।
একটু করে পেছন দিকে এগিয়ে যাবেন…পেছন দিকে এগিয়ে যাবেন একটু করে…কন্ডাক্টর চেঁচিয়ে যাচ্ছিলো সমানে। এদিক ওদিক করে পল্লবীকে লেডিস সিটে একটা জায়গা করে দিয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে দরজার একটু পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল তৃষান। অনেক বছর ধরে বাসে এটাই ওর ফেভারিট জায়গা। আজ কিন্তু বেশিক্ষণ এই নিশ্চিন্তির ভাবটা ওর মনে স্টে করলো না। শুধু একটা কথাই মনে হতে লাগলো যে এরপর কি হবে?
চলো না বের হই একটু কোথাও…অফারটা একসেপ্ট করার পর থেকে অনেকবার এই কথাটা পল্লবীকে বলেছে তৃষান। শেষমেশ আজকের দিনে এসে পল্লবী রাজি হয়েছে। কাল সন্ধেয় ওকে ডেকে যখন এই কথাটা বলেছে পল্লবী, তৃষান শুধু একটাই কথা ওকে বলেছিল…একটু সুন্দর করে সেজে এসো প্লিজ। উত্তরে পল্লবী হেসে বলেছিলো-ও তোমায় ভাবতে হবে না।
কিন্তু আজ সকালে মিট করার পর থেকে যথেষ্ট ভাবনাতেই পড়ে গিয়েছে তৃষান। আসলে ওর অনেকদিনের ইচ্ছে যে একটা বাম্পার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরবে। যেমন লোকজনের দেখে ঠিক সেরকম, একদম সলিড…চাবুক। পল্লবীর ফিগারও ঠিক সেরকমই। আসলে কাল সুন্দর করে সেজে আসতে বলাতে তৃষাণ যা বলতে চেয়েছিলো তা পল্লবী একটু বেশীই বুঝে ফেলতে পারাতেই আজকে ওর এই বিপত্তি। শাড়িটা যেভাবে পল্লবী পড়ে এসেছে আজ তাতে তৃষানের কেসটা ঠিক -আপনার গর্ব, পড়শীর ঈর্ষা।
বাসের দরজার একটু পেছনে ওর ফেভারিট জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকবার তৃষানের মনে হয়েছে যে এই পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ বাস কনডাক্টররা। আস্তে…,লেডিস আছে… বলার পর বাসটা যখন ব্রেক মারে উনারা বেশির ভাগই এতো সুন্দর করে পেছনে হাত দিয়ে লেডিসদেরকে বাস থেকে নামতে সাহায্য করেন যে একটা সময় তৃষানের বারবার মনে হয়েছে কেন ও এখোনো বাস কনডাক্টর হয়ে উঠছে না। জীবনের সব সুখ তো ওখানেই…ঐ বাসের দরজায়।
কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক তৃষানের এখোনো বাস কনডাক্টর হয়ে ওঠা হয়নি। তবে বাসে উঠলেই ও এমন একটা জায়গায় দাঁড়ায় যেখান থেকে বাস কনডাক্টরদের লেডিসদের সুন্দর করে নামতে হেল্প করার ব্যাপারটা পুরোপুরি দেখা যায় আর এতোদিন এতেই ও মজা পেয়ে আসছিলো ও। তবে আজকের কেসটা একদম অন্যরকম। কারণ আজকে ওর সাথে লেডিস আছে।
আর আজ ভ্যালেন্টাইন ডে-র দিন। চারিদিকে সব জুটিতে জুটিতে। তৃষানের ইচ্ছে ছিল ওর বাইকটায় আজ পল্লবীকে বসিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াবে। হেলমেট পড়বে না। একটা সানগ্লাস পড়বে। আর ওর জিম করা বডিকে পেছনের উঁচু সিটটায় বসে পুরো জড়িয়ে ধরে থাকবে পল্লবী। এরকম একটা দৃশ্য কাল রাতে শোবার সময় অনেকবার দেখেছে তৃষান। আহা! গতবার আই পি এলে জুয়ায় বেশ কিছু টাকা জিতে তা দিয়ে বাইক কেনার পর থেকে এটাই তো স্বপ্ন ছিলো ওর বহুদিনের।
কিন্তু এই মেয়ে সকালে এসে মিট করার পর থেকেই ওর পুরো প্রোগ্রাম পালটে দিয়েছে। সে কিছুতেই বাইকে করে ঘুরবে না। বাইক থেকে না কি ওর পড়ে যাবার ভয় লাগে। রাজ্যের তুঙ্গ মেয়েরা সব ঘুরে বেড়াচ্ছে কি সুন্দর বাইকের পেছনে বসে, কেউ পড়ছে না আর এই মেয়ে না কি পড়ে যাবে! মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে গেলেও কিচ্ছু বলতে পারেনি তৃষান। বললেই যদি কেস গুবলেট হয়ে যায়। তাই বাইক রেখে পল্লবীর কথামতো বাসে করে অল্প দূরে একটা পার্কে গিয়ে ওরা বসবে বলেই আপাতত ঠিক হয়েছে।
আচ্ছা, বসবিই না যখন তুই বাইকে তাহলে ওভাবে সেজে আসার কি দরকার ছিলো-এই কথাটা বলতে না পারলেও এতক্ষণ এটা ভেবেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিলো তৃষানের। এখন তো সারাদিন দুজনে পাশাপাশি হাঁটলেই সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে পল্লবীর দিকে। এমনিই তো ছেলেদের দিকে কেউ প্রায় দেখেই না… আর এটাও এখন সারাদিন ধরে ফিল করবে তৃষান যে লোকজন জাস্ট হাঁ করে পল্লবীকে গিলছে… আর ওর কিচ্ছু করারও থাকবে না।
তার আগেই এখন এই উটকো ঝামেলা। তৃষান খুব ভালো করে জানে যে কন্ডাক্টর পল্লবীকে বাস থেকে নামার সময় খুব হেল্প করবে, কিন্তু কেসটা হচ্ছে তৃষান এটা এখন না পারবে পল্লবীকে বলতে আর এটাও ও ডিসাইড করে উঠতে পারছে না যে পল্লবীর আগেই ও বাস থেকে নেমে যাবে না পরে নামবে কারণ এতদিন ওর যেটা দেখে ভালো লাগতো তা আজ আর ভালো লাগবে না।
সংশ্লিষ্ট পোস্ট
সোয়েটার
গন গনে নীল শিখা মেলে গ্যাসের উনুন জ্বলছে। কেটলিতে জল সেই কখন থেকে ফুটে চলেছে। বাষ্প হয়ে অর্ধেক জল মরে গেছে। সেই দিকে কোনও খেয়াল নেই নীলার। সে একটা বেতের গদি মোড়া আরাম চেয়ারে বসে আছে। কিচেনটা ঢের বড়। প্রায় প্রমাণ সাইজ একটা ঘরের মতো। এখানে বসে উলের কাঁটায় শব্দ তুলে সোয়েটার বুনে যাওয়া তার একমাত্র বিলাসিতা। শীতের দিনে আগুনের এই উত্তাপটা কী যে আরামের, নীলা তা কাউকে বোঝাতে পারবে না। গ্যাসটা কতক্ষণ জ্বলছে সে দিকে তার কোনও খেয়াল নেই। চায়ের জল বসানোটা আসলে একটা ছুতো। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতাকে সে প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিচ্ছে। গ্যাস পুড়ছে পুড়ুক। সেই নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। তার স্বামী বিপুলের টাকার অভাব নেই। তারা বিশাল ধনী না হতে পারে কিন্তু এই সব সামান্য বে-হিসেবী খরচ করার মতো তাদের ঢের পয়সা আছে।
এখানে আসবে না কেউ
চেক - হ্যালো টেস্টিং - শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন – জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গেল। ক্যালেন্ডারটা উড়ছে। দেওয়ালে ঘষটানির একটা শব্দ। পুরোনো বছর উড়ছে। আমি ৩১শে ডিসেম্বরে এসেই থমকে গেছি। বাইরে নতুন বছর চলছে, আমি পুরোনো বছরে। কীরকম অদ্ভুত লাগে। কাকতালীয় ভাবে দেওয়াল ঘড়িটাও বন্ধ। ব্যাটারি শেষ।
অবনী বাড়ি আছো
“আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছ?”